কেমন ছিলো ইসলামের সোনালি যুগ?

ইসলামের ইতিহাস নিয়ে জানার চেষ্টা করলে যেই শব্দটা আমাদের সবচেয়ে বেশি ভাবায় তা হলো ‘ইসলামের স্বর্ণযুগ‘। কোন সময়টা আসলে ইসলামের স্বর্ণযুগ ছিলো, আর কেনই বা এমনটা বলা হয়ে থাকে ইত্যাদি নানান প্রশ্ন মাথায় ঘুরে। জানতে ইচ্ছে করে সেই যখন যুগের কাজ ও অর্জন সম্পর্কে।

বিভিন্ন জায়গা থেকে পাওয়া তথ্যের মতে ইসলামের স্বর্ণযুগের সময়টা সপ্তম শতকের মাঝামাঝি থেকে ত্রয়োদশ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত বিস্তৃত।

ওই সময় জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার কেন্দ্রে ছিলো মুসলিম সমাজ। একদিকে তারা যেমন জ্ঞানের বিনিময়ের মাধ্যমে জ্ঞানের বিভিন্ন শাখাকে সমৃদ্ধ করতেন, তেমনি প্রাচীন বিভিন্ন শাখার জ্ঞানকে অনুবাদের মাধ্যমে চিরস্থায়ী সংরক্ষণের ব্যবস্থাও করতেন। ওইসকল পন্ডিতদের অক্লান্ত পরিশ্রমের কারণে মানবজাতি অতীতের জ্ঞান-বিজ্ঞানের অনেক কিছুই জানতে পেরেছে।

ওই সময়ের মুসলিম সমাজকে বলা হয়ে থাকে বিশ্বের ইতিহাসের প্রথম ‘সত্যিকারের এক বৈশ্বিক সভ্যতা‘ যা কিনা জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার জন্য বিশ্বের বহু প্রান্ত-ধর্ম-বর্ণ-মানসিকতা-অভিজ্ঞতার মানুষের মিলন ঘটাতে পেরেছিলো।

ইসলামের স্বর্ণযুগের উত্থানের পেছনের কাহিনী কিংবা অর্জন জেনে নেয়া যাক। প্রথমেই আসা যাক ধর্মীয় দৃষ্টিকোণের দিকে। পবিত্র কোরআন শরীফ এবং হাদিসে জ্ঞানার্জনের জন্য সবসময়ই মানুষকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে এবং অনুপ্রাণিত করা হয়েছে। আর এই কোরআন ও হাদিস ইসলামের স্বর্ণযুগের এক বিশাল অর্জন। আর এই ধর্মীয় অনুপ্রেরণা বর্তমানের অনেক মুসলিম মনিষীর মূল চালিকাশক্তি।

এরপরেই আসে নতুন সংস্কৃতিকে গ্রহণ করার প্রচেষ্টার কথা। বিভিন্ন সময় যুদ্ধে জয়ের ফলে নতুন নতুন যেসব এলাকা মুসলিম সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হতো, সেখানকার জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চায় পরবর্তীতে মনোনিবেশ করতেন তারা।

উমাইয়াদ ও আব্বাসীয় খেলাফতের সময় খ্রিষ্টান ও হিন্দু পন্ডিতেরা আরব ইসলামিক সভ্যতার উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন। সিরিয়াক ও ভারতীয় দার্শনিকদের অনেক কাজই পরবর্তীতে আরবিতে অনুবাদে সাহায্য করেছিলেন তারা।

প্রযুক্তিগত উন্নতির কথাও বাদ দেওয়া চলবে না। ৭৫১ খ্রিষ্টাব্দে তালাসের যুদ্ধে বন্দী চাইনিজদের কাছ থেকে কাগজ তৈরির পদ্ধতি শিখে নেয় মুসলিমরা। পরবর্তীতে এ প্রক্রিয়ার আরো উন্নতি করেন যা কিনা ইসলামের স্বর্ণযুগের এক গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন।

আরও অন্যান্য ব্যাপারের মধ্যে রয়েছে হজ্ব। এই হজ্ব বিশ্ব মুসলিমদের এক মিলনমেলা। আরবের বণিকদের ভূমিকাও ছিলো এক্ষেত্রে অনস্বীকার্য। ব্যবসার উদ্দেশ্যে তারা চীন, ভারত, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, আফ্রিকা ইত্যাদি বিভিন্ন জায়গায় যেতেন। অত:পর সেখান থেকে নানা প্রযুক্তিগত জ্ঞান উনারা নিয়ে আসতেন।

এবার আলোচনা করবো জ্ঞান-বিজ্ঞান থেকে শুরু করে জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইসলামী সমাজব্যবস্থা কেমন ছিলো ইসলামী স্বর্ণযুগে।

জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চা- ইসলামের স্বর্ণযুগের মুসলমানদের জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চায় যে অবদান তা অবিস্বরণীয়। রসায়নবিদ, ভূতত্ত্ববিদ, গণিতবিদ, পদার্থবিজ্ঞানবিদ ইত্যাদি নানান বিভাগে মুসলমানদের অবদানের ফলে আজকের প্রযুক্তি অনেক এগিয়ে। মানুষ এখন যা অর্জন করছে, তার অনেক কিছু পূর্বের এই মনীষিদের বই থেকে প্রাপ্ত জ্ঞান নিয়ে।

শিক্ষাব্যবস্থা- শিক্ষা ব্যবস্থায়ও মুসলিমদের অবদান অনেক। সেই সময় শিক্ষা ব্যবস্থা অনেক গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হতো। তখনকার সময়ে মরক্কোর ফেজ শহরে স্থাপিত আল-কারাওউইন বিশ্ববিদ্যালয় গিনেজ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের তথ্য মোতাবেক বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো এবং একই সাথে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়।

এরপরই যদি বলি মিশরের আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা সেটাও ফাতিমীয় খেলাফতের আমলে ৯৭০ (মতান্তরে ৯৭২) খ্রিষ্টাব্দে স্থাপন করা হয়। সুতরাং বুঝাই যাচ্ছে ইসলামী স্বর্ণযুগে মুসলমানদের শিক্ষাক্ষেত্রে অবদান ছিলো অনেক।

অর্থনীতি- ইসলামী স্বর্ণযুগের অর্থনীতিতে উন্নতি ছিলো চোখে পড়ার মতো। আটলান্টিক মহাসাগর থেকে শুরু করে ভূমধ্যসাগরের পশ্চিমে এবং ভারতীয় মহাসাগর থেকে চীনা সাগরের পূর্ব পর্যন্ত ছিলো তাদের বাণিজ্যিক দাপট। এতো বিশাল বাণিজ্যিক অবকাঠামো ছিলো দীর্ঘ কয়েক শতাব্দী ধরে যা কিনা ইসলামী সভ্যতাকে উন্নতির শিখরে আরোহনের অন্যতম চালিকাশক্তি হিসাবে কাজ করেছে।

কৃষিব্যবস্থা- যদি ইসলামের স্বর্ণযুগের কৃষিব্যবস্থার কথা বলি, তাহলে বলতে হবে ওই সময়ে কৃষি ব্যবস্থা এতটাই উন্নতি ঘটেছিলো যে, অনেকেই একে ‘আরবের কৃষি বিপ্লব’ বলে থাকেন। বাণিজ্যের সময় বিশ্বের বিভিন্ন জায়গা থেকে খাদ্যশস্য এনে তা নিজেদের মাটিতে উৎপাদনের ব্যবস্থা করার পাশাপাশি মুসলিমদের হাতে নিত্যনতুন কৃষিপ্রযুক্তির উদ্ভব দেখেছে সেই যুগ।

শিল্পোন্নয়ন- ইসলামি স্বর্ণযুগে শিল্প-কারখানা চালাতে পানি এবং বাতাসের শক্তিকে কাজে লাগানো শুরু হয়েছিলো। ওই সময় সীমিত পরিসরে জীবাশ্ম জ্বালানীর ব্যবহারও শুরু হয়ে গিয়েছিলো। মুসলিম বিশ্ব সপ্তম শতাব্দী থেকেই ওয়াটার মিলের ব্যবহার শুরু হয়ে গিয়েছিলো।

সেই সময়ে মুসলিম বিশ্বে যেসব মিল ছিলো তার মাঝে উল্লেখযোগ্য হলো ফুলিং মিল, গ্রিস্ট মিল, রাইস হালার ইত্যাদি।

উপরের আলোচনায় সংক্ষিপ্তভাবে ইসলামী স্বর্ণযুগকে তুলে ধরা হয়েছে। কিন্তু বিস্তারিত আরও গভীর, যা আমাদের প্রত্যেকেরই জানা উচিত। তবে এই সকল কিছু জানতে বই পড়ার বিকল্প নেই।

হোক হাদিস কিংবা ইতিহাস, অনেকেই ভালো বই পাওয়া নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে থাকেন। আপনি যদি তেমনি একজন হয়ে থাকেন, তাহলে ভালো মানের ইসলামিক বইগুলো সহজেই পেতে যোগাযোগ করুন দারসুল হিকমাহ বুকস্টোরে। যেখানে পাবেন ইসলামিক ইতিহাস, সিরাহ, দাওয়াহ, কর্মপন্থা, উসুল, ইলম, আমল, আত্মশুদ্ধি সহ নানান ক্যাটাগরির ইসলামিক বই।

Main Menu