কেন সিরাত পড়বেন?

গুণীজনদের জীবনী যুগের পর যুগ মানুষের কাছে সমাদৃত থাকে। মানবসভ্যতার ইতিহাসে যতজন গুণী মানুষের দেখা মিলেছে মহানবী মুহাম্মদ স. ছিলেন তাঁদের অন্যতম। মুসলিম দৃষ্টিকোণ থেকে নিঃসন্দেহে জগতের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব। এখান থেকে দেড় হাজার বছর আগে ডাটা কালেকশন রিসোর্স স্বয়ং সম্পূর্ণ ছিলো না। বিদ্যা, জ্ঞান কিংবা যেকোনো তথ্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা ছিলো অত্যন্ত দুর্বল প্রকৃতির। তার মধ্য দিয়েও মুসলিম স্কলারগণ রসূল স. এর আদর্শ, চরিত্র নিখুঁতভাবেই লিপিবদ্ধ করেছেন। যার‌ মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের কল্পনার জগৎ উৎরে গিয়ে বাস্তবিক অর্থে এই মহান মানুষটির সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারি।

আমাদের ব্যক্তি জীবন, পারিবারিক জীবন, সামাজিক জীবন, রাজনৈতিক জীবন, অর্থনৈতিক জীবন, মানসিক স্বাস্থ্য ইত্যাদির উন্নয়নের জন্য সিরাত পাঠ করা আবশ্যক। মানুষ যা চিন্তা করে, ভাবে বা পড়ে তার চরিত্রের মধ্যে তার প্রতিফলন ঘটে। মহানবী হযরত মুহাম্মদ স. ও সাহাবায়ে কেরাম রা.দের চরিত্র নিঃসন্দেহে সর্বোত্তম চরিত্র‌। আমরা যখন সে সব ঘটনা পড়ি এবং কল্পনা করি তখন তা আমাদের মধ্যে প্রতিফলন ঘটায়। বিভিন্ন খারাপের মধ্য থেকে দূরে রাখে, আত্মমর্যাদা তরান্বিত করে।

সিরাতের বেসিক ধারণা বলতে–
ইসলামের প্রথম দুই শতকে সিরাত দিয়ে মূলত যোদ্ধাদের সামরিক কাহিনী বোঝাত। নির্দিষ্টভাবে মহানবী হযরত মুহাম্মদ স. এর জীবনী বোঝাতে সিরাত শব্দটির প্রচলন হয় পরবর্তীতে। যা প্রথম ব্যবহার করেন মুহাদ্দিস ইবনে শিহাব আল-যুহরি। পরবর্তীতে ইবনে হিশাম পূর্ণাঙ্গ রূপ দান‌ করেন। উইকিপিডিয়া তথ্য মতে, সীরাত সাহিত্যে বিভিন্ন রকমের বিষয় রয়েছে যা মূলত মুহাম্মদ (সা) ও তাঁর সাহাবিদের দ্বারা পরিচালিত সামরিক অভিযানের বিবরণ থাকে। এই সীরাতে বিভিন্ন রাজনৈতিক চুক্তি (যেমন হুদায়বিয়াহ চুক্তি বা মদিনার সংবিধান), সামরিক তালিকাভুক্তি, কর্মকর্তাদের নিয়োগ, বিদেশি শাসকদের চিঠিপত্র ইত্যাদির মতো লিখিত নথিও রয়েছে। এটিতে বিদায় হজ্জ্বের মত মুহাম্মদ (সা) এর করা কিছু বক্তৃতা ও খুতবাও বর্ণিত রয়েছে। কিছু কিছু জায়গায় বিভিন্ন ঘটনা ও যুদ্ধের সময়ের অনেক কবিতার শ্লোকও রয়েছে।

পরবর্তী সময়কালে, নির্দিষ্ট ধরণের ঘটনা নিয়ে তাদের নিজস্ব পৃথক ঘরানা(genre) বিকশিত হয়েছিল। একটি ঘরানা হলো ;রাসুলের অলৌকিক ঘটনা’, যাকে আলাম আল-নুবুওয়া বলা হয় (আক্ষরিক অর্থে, “নবুওয়াতের প্রমাণ)। আরেকটি ঘরানা হল, ফাদা’ইল ওয়া মাসালিব – এমন ঘটনা যা তার সাহাবি, শত্রু এবং মুহাম্মদ (সা) এর সময়কালের মানুষদের নিয়ে বলে। কিছু কিছু সীরাতে মুহাম্মদ (সা) – এর কাহিনী ছাড়াও তার মধ্যে পূর্ববর্তী নবী, পারস্য রাজা, প্রাক-ইসলামিক আরব উপজাতি এবং খোলাফায়ে রাশিদীনেরর ঘটনাও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

কুরআনে বর্ণিত বিভিন্ন ঘটনার আলোকে সীরাত গঠিত হয়। এই অংশগুলি প্রায়শই তাফসির এবং শানে নুযূলের লেখকরা ব্যবহার করেন।

বর্তমানে বাংলা ভাষার অল্প কিছু সিরাত বইয়ের‌ সন্ধান পাওয়া যায়। যার অধিকাংশই ব্যাকডেটেড এডিশন, যা পূর্নাঙ্গ নয় এবং ধারাবাহিকতা বর্জিত। বাংলাদেশে ইসলামী সাহিত্য ও কিতাব জগতে ‘মাকতাবাতুল আযহার’ এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। যারা ‘সীরাত বিশ্বকোষ’ নামে ১১ খন্ডের অনূদিত পূর্নাঙ্গ সিরাত কিতাব প্রকাশ করেছে। এটি ‘দারুস সালাম’ সৌদি আরব থেকে প্রকাশিত আধুনিক সংস্করণ। যেটি থাকতে পারে আপনার পছন্দের তালিকায় প্রথম স্থানে।

অনেকেই এই ধরনের ভালো বই পাওয়া নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে থাকেন। আপনি যদি তেমনি একজন হয়ে থাকেন, তাহলে ভালো মানের ইসলামিক বইগুলো সহজেই পেতে যোগাযোগ করুন দারসুল হিকমাহ বুকস্টোরে। যেখানে পাবেন ইসলামিক ইতিহাস, সিরাহ, দাওয়াহ, কর্মপন্থা, উসুল, ইলম, আমল, আত্মশুদ্ধি সহ নানান ক্যাটাগরির ইসলামিক বই।

Main Menu